প্রথম পাখি আর্কিওপটেরিক্স

. Friday, October 31, 2008
  • Agregar a Technorati
  • Agregar a Del.icio.us
  • Agregar a DiggIt!
  • Agregar a Yahoo!
  • Agregar a Google
  • Agregar a Meneame
  • Agregar a Furl
  • Agregar a Reddit
  • Agregar a Magnolia
  • Agregar a Blinklist
  • Agregar a Blogmarks




উপরের ছবিদুটো আর্কিওপটিরিক্সের ফসিল।
নিচের ছবিদুটো ফসিল দেখে কল্পনা করে শিল্পীর আকা।

সমকাল পত্রিকার কালস্রোত বিভাগে আর্কিওপটেরিক্স Archeopteryx (Archaeopteryx) সম্বন্ধে একটি মনোজ্ঞ আলোচনা দেখলাম। লিখেছেন নোমান মোত্তাকী।
আজকে আমরা যে প্রাণীটিকে পাখি বলে ডাকি, তাদের পূর্বপুরুষ এসেছে ডাইনোসরের একটি প্রজাতি থেকে। জুরাসিক যুগে দুই পাওয়ালা বিশাল আকৃতির পালকযুক্ত ঠোঁটে দাঁতওয়ালা ডাইনোসর থেকে বর্তমানকালের পাখিগুলো বিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানকালের পাখিদের মতো এদের শরীরেও বায়ুথলি ছিল, হৃদপিণ্ড ছিল চার প্রকোষ্টবিশিষ্ট। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে প্রথম পাখির কথা রচনায়।

কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যান প্রক্রিয়ায় প্রাচীনকালের পাখিদের এসব বৈশিষ্ট্য ঠিকঠাকভাবেই বুঝতে পারা যায়। আর এসব বৈশিষ্ট্য আজও অবশিষ্ট রয়েছে বর্তমানের পাখিদের মাঝে।

মূলত সরীসৃপ ও পাখিতে রূপান্তরিত হওয়া ডাইনোসরদের একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল, যার প্রমাণ মিলেছে আরকিওপটেরিক্সের একটি জীবাশ্ম থেকে। সেগুলো ছিল পালকাবৃত সরীসৃপ, যারা প্রথমে ছিল স্থলচর। পরে ক্রমাগত পাখিতে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়ায় আবাস স্থাপন করেছিল পাহাড়ের চূড়ায়। খুঁজে পাওয়া আরকেওপ্টিরিক্সের জীবাশ্মটি আবিষ্কৃত হয়েছিল চার্লস ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিসিস’ প্রকাশের মাত্র দুই বছরের মাথায় (১৮৬১)। প্রাণী বিবর্তনের এটি ছিল একটি মুখ্য প্রমাণ, যা জীবাশ্মবিদ এবং একই সঙ্গে পাখিবিদদের আগের সব চিন্তা-ভাবনাকে বিবর্তনের আলোকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।

অবশ্য ১৯৯০ সাল থেকেই পালকাবৃত অসংখ্য ডাইনোসরের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া যেতে লাগল, যা থেকে ডাইনোসরের পাখি হওয়ার ধারণাটি আরো সুদৃঢ় হলো। এসব ফসিলের অধিকাংশই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। ক্রিটেসিয়াস যুগে এই অঞ্চলটি ছিল সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোর অন্যতম এবং স্বাভাবিকভাবেই উড়ন্ত ডাইনোসরের আবাসস্থল। পালকাবৃত ডাইনোসরের মধ্যে অন্যতম ছিল ডিলং, মাইক্রোরেপ্টর, প্রটারিচপ্টিরেক্স, সাইনোরনিথসরাস এবং জিনফেনগপ্টিরেক্স। এছাড়া ডাইনোসরসদৃশ পাখি কনফিউসিওসরনিসের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেছে! যা অর্ধলাখ বছর আগেও পৃথিবীতে বিচরণশীল ছিল বলে ধারণা করা হয়। তাছাড়া স্থলচর ডাইনোসরের এমন কতগুলো প্রজাতির সন্ধন পাওয়া গেছে, যেগুলো পাখি ছিল না, অথচ তাদের দেহ ছিল ছোট এবং নরম পালকে আবৃত। লাখ লাখ বছর আগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ডাইনোসরের জীবাশ্ম থেকে চামড়া বা পালক কোনোটারই সন্ধন পাওয়া যায়নি। কেননা, লাখ লাখ বছরের ধারাবাহিকতায় শরীরের এসব অংশের স্থায়িত্ব হয় খুবই কম। তবে পরীক্ষণ দ্বারা চামড়া বা পালকের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। অবশ্য, পাখিতে রূপান্তরিত ডাইনোসর ছাড়াও স্থলচর ডাইনোসরের বেশকিছু ছিল পালকাবৃত সরীসৃপ!

ট্রাইনোসরাস রেক্সের জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণে সুষ্ঠভাবে ডাইনোসরের বিবর্তনের ধারাবাহিকতার বর্ণনা দেওয়া যায়। চারটি পা, বিশাল আকৃতির দেহ-কাঠামো এবং অত্যন্ত হিংস্র মাংসাশী স্বভাবের এই প্রজাতিটি ডিম পাড়ার সময় পেটের ভেতর বিশেষ ধরনের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ একটি হাড় গঠন করত। ডিমের ওপরকার শক্ত আবরণ তৈরিতে এই হাড়ের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল; এবং এ থেকে প্রমাণিত হয়, ট্রাইনোসরাস রেক্স প্রজাতির ডাইনোসর ছিল স্ত্রী প্রজাতির। আর তাদের প্রজনন বৈশিষ্ট্য আধুনিককালের পাখির মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। ট্রাইনোসরাস রেক্স ছিল স্থলচর সরীসৃপ। আর পাখি প্রজাতির ডাইনোসরগুলো তাদের থেকে আচরণগত দিক দিয়ে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরপরও প্রজনন বৈশিষ্ট্যের আলোকে সহজেই অনুমেয়, একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভব ঘটেছিল এই দুটি ভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের। তাছাড়া তাদের রক্তনালিগুলো ছিল আধুনিক পাখিকুলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ডাইনোসর সম্পর্কে আমাদের ধারণাগুলোর সাধারণ ভিত্তি হচ্ছে- খুঁজে পাওয়া জীবাশ্মের গঠন, আবাসস্থলের এবং কম্পিউটার সিমুলেশনে খুঁজে পাওয়া জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলো, যার শতভাগই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে আমাদের কল্পনা আর অনুমান দ্বারা। তবে আধুনিক সময়ে বেঁচে থাকা দুটি প্রজাতির (কুমির জাতীয় সরীসৃপ ও পাখি) আচরণগত কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য যে প্রাচীন ডাইনোসরদের মাঝে বিদ্যমান ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিযোজনের স্বার্থেই ডাইনোসরের শরীরে লোম ও পালক সৃষ্টি হয়েছিল। ট্রিয়াসিক যুগেই পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া ডাইনোসরের পরিবেশ ভেদে অভিযোজন ঘটেছিল, যার ফলে তারা পৃথকভাবে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকতে পারে। যেসব ডাইনোসরের অভিযোজন ঘটেছিল অপেক্ষাকৃত শীতল পরিবেশে (যেমন, এন্টার্কটিকা বা অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের ডাইনোসর), সেগুলোর অভিযোজনের প্রক্রিয়াটি ছিল ভিন্নতর। পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা কম হওয়ায় দেহাভ্যন্তরে সৃষ্ট তাপ যাতে অতিমাত্রায় বের হতে না পারে, সেজন্য তারা শরীর আবৃত করেছিল ঘন পালক দ্বারা।

কল্পনাপ্রসূত প্রণোদনাগুলো ডাইনোসরকে আমাদের কাছে অতিকায় দানব হিসেবে পরিচিত করেছে, যদিও তৃণভোজী ডাইনোসরের স্বভাব ছিল অপেক্ষাকৃত ধীর প্রকৃতির। তীক্ষ্ণ দাঁতযুক্ত এই বিশাল আকৃতির সরীসৃপের সঙ্গে তখন সহাবস্থান করত আকাশে উড়ে বেড়ানো কিছু সরীসৃপ, যাদের দাঁতের স্থানটি দখল করেছিল শক্ত দুটি ঠোঁট (তারাই ছিল আধুনিক পাখির পূর্বপুরুষ এবং পৃথিবীর প্রথম পাখি), যা দিয়ে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিত তারা। এসব ডাইনোসরের সামনে দুটি পা অভিযোজনের স্বার্থেই এক পর্যায়ে ডানায় রূপান্তরিত হয়েছিল। আর এদের চোয়াল শক্ত আবরণীতে আবদ্ধ হয়ে ঠোঁটে মিশে যায়।

আরকেওপ্টিরিক্সের জীবাশ্মের আধুনিক বিশেল্গষণ থেকে জানা যায়, এরা সম্পূর্ণভাবে পাখিতে পরিণত হয়েছিল এবং এদের চোয়ালে আধুনিক পাখির মতো ছিল বেশ উন্নত দাঁত। এদের ছিল একটি যুক্ত হাড়ের লেজ আর ডানায় ছিল পাখিদের মতো পালক। আধুনিক পাখির মতোই তাদের মস্তিষ্ক ছিল বেশ উন্নত। এদের প্রখর দৃষ্টিশক্তির কথা উলেল্গখ করতে গেলে এভাবেই বলা যায়- এরা খুব দ্রুত টেলিস্কোপীয় দৃষ্টিশক্তি থেকে মাইক্রোস্কোপীয় সূক্ষ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতায় দৃষ্টিকে রূপান্তর করতে পারত। আনুমানিক ৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে অন্যান্য প্রজাতির পাশাপাশি উড়ন্ত সরীসৃপের অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হয় কিছু কিছু সাঁতার কাটতে সক্ষম সরীসৃপও। তবে পৃথিবীতে তখন এমন কিছু সরীসৃপের অস্তিত্ব ছিল, যাদের সঙ্গে ডাইনোসরের সরাসরি কোনো সম্পর্ক ছিল না। আকস্মিক বিলুপ্তির খাতায় তারাও নাম লেখাল। তবু কোনো এক কারণে টিকে গিয়েছিল কিছু সরীসৃপ, যাদের বিকট আওয়াজে আবারো কাঙ্ক্ষিত হয়েছিল পৃথিবী। তারা আজও বেঁচে আছে এই পৃথিবীর বুকে- কখনো সরীসৃপ হয়ে, কখনোবা পাখি হয়ে। আমাদের আবির্ভাব তাদের জন্য অশনিসংকেত! যদিও তাদেরই কোনো এক পূর্বপুরুষের ভয়ে আমরা ভীত ছিলাম এবং অস্তিত্বের স্বার্থে উপনিবেশ স্থাপন করেছিলাম বৃক্ষের মগডালে।
সমকাল, ৩১ অক্টোবর, ২০০৮

0 comments: