সুর্যের আবার কী হলো?

. Friday, April 11, 2008
  • Agregar a Technorati
  • Agregar a Del.icio.us
  • Agregar a DiggIt!
  • Agregar a Yahoo!
  • Agregar a Google
  • Agregar a Meneame
  • Agregar a Furl
  • Agregar a Reddit
  • Agregar a Magnolia
  • Agregar a Blinklist
  • Agregar a Blogmarks

ভয়ের কিছু নেই। সুর্যের কোনো মতিভ্রম হয়নি। সুর্য স্বাভাবিক আচরণ করছে। সুর্যকে নিয়ে নতুন ভয়কে এভাবেই উড়িয়ে দিলেন নাসার সৌরপদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড হ্যাথওয়ে। আর হ্যাথওয়ের এ কথা সুর্যকে নিয়ে আজব সব আশঙ্কায় স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে অনেকটাই।
‘তাহলে ভয়টা কী ছিল?’
‘ভয়টা ছিল, সুর্য নাকি দিন দিন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে আশাতীতভাবে। এর আলামতও দেখা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।’
‘কী আলামত?’
‘সুর্যে সৌরদাগের (সোলার স্পট) সংখ্যা কমে গেছে, প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে কিছুদিন ধরে।’
‘সাধারণত সোলার মিনিমামের সময় এমন অবস্থা হয়। ১১ বছর পর পর এই চক্রে এমন সৌরদাগহীন সময় আসে। এখন এই সময় চলছে। এতে ভয়ের কী আছে? এমন তো হয়ই।’
‘তা তো হয়ই। কিন্তু এবার একটু বেশি বেশি হচ্ছে যে। সোলার মিনিমাম অনেক বেশি দীর্ঘ লাগছে। এত দিন এ অবস্থায় থাকার কথা নয়। বিষয়টা অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না তো? আমাদের তারাটি কি নিভে যাওয়ার সংকেত দিচ্ছে? তেজহীনভাবে এত দিন থাকার পাত্র তো সুর্য নয়। তাহলে?’
এই ভয় আর জল্পনাকল্পনার ডালপালা যখন অনেক বড় হয়ে গেছে, তখনই আশার বাণী শুনিয়েছেন হ্যাথওয়ে। তিনি বলছেন, এমন হতেই পারে। অতীতে বহুবার হয়েছে, এর চেয়ে অনেক বেশি দিন ছিল সোলার মিনিমাম। এবার এ অবস্থা চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। তবে গত শতকের শুরুর দিকের কোনো এক সময় এই সোলার মিনিমাম এর দ্বিগুণের বেশি সময় স্থায়ী ছিল। দুটি সোলার ম্যাক্সিমামকে আলাদা করে এই সেলার মিনিমাম। শেষ সোলার ম্যাক্সিমামটি হয়েছিল ২০০০-০১ সালে।
‘এই সোলার ম্যাক্সিমাম-মিনিমামটা কী?’
সোলার ম্যাক্সিমাম-মিনিমাম নির্ধারণ করা হয় সুর্যে কোনো সময়ে সৌরদাগের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। সৌরদাগের ঘটনা বেশি হলে সোলার মিনিমাম পিরিয়ড বলে, আর কম হলে সোলার মিনিমাম। সৌরদাগ হচ্ছে সুর্যের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে সৃষ্ট বিশেষ এক ধরনের অবস্থা। আশপাশের এলাকার তুলনায় সুর্যের কোনো জায়গার তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে সেখানে অন্ধকার গর্তের তৈরি হয়, যা পৃথিবী থেকেও দেখা যায়। সৌরদাগে সাধারণত চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার কেলভিন তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। আর আশপাশে থাকে পাঁচ হাজার ৮০০ কেলভিন। এ সময় তাপের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন মাত্রার সৌর বিকিরণের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব পড়ে পৃথিবীতেও। সেই সঙ্গে সৌরদাগের আশপাশে ভিন্নমুখী অনিয়মিত প্রবাহের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে সৌরদাগের কারণে সুর্য থাকে অনেকটা উত্তাল। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রায়ও প্রভাব পড়ে। সৌরদাগের সংখ্যা মিনিমাম পিরিয়ডে প্রায় শুন্যের কাছাকাছি চলে আসে। তখন সপ্তাহেও একটি সৌরদাগের দেখা মেলা ভার। এই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ হয় ম্যাক্সিমামে। তখন দুরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বেশ সহজেই দেখা যায় সুর্যের এই কলঙ্ক। ম্যাক্সিমাম থেকে সৌরদাগের সংখ্যা আবার কমতে কমতে মিনিমামে আসে। এই মিনিমাম পিরিয়ড থেকে আরেক মিনিমাম পর্যন্ত সময়কে সৌরদাগ চক্র বলে। এই চক্র সম্পন্ন হতে মোটামুটি ১৩১ মাস লাগতে পারে। এই সময় সাধারণত ১৪ মাস পর্যন্ত কমবেশি হতে পারে। মিনিমাম পিরিয়ড এক বছরেরও কম সময় থাকে। কিন্তু এবার প্রায় দুই বছর হতে চলল সুর্যের তেজের দেখা মিলছে না। তবে এই ঘটনা এত অস্বাভাবিক কিছু নয়। মিনিমাম পিরিয়ড আরও অনেক বেশি দীর্ঘ হওয়ার নজির আছে। ১৬৪৫ সালে সবচেয়ে বড় মিনিমাম পিরিয়ড শুরু হয়েছিল; সুর্যের আবার জ্বলে উঠতে তখন ৭০ বছর লেগেছিল। সবচেয়ে বড় এই মিনিমাম পিরিয়ডকে মাউন্ডার মিনিমাম বলে। এর জন্যই সতেরো শতকে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক কম ছিল। এই মাউন্ডার মিনিমামের কারণ বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো অজানা। তবে এর পর থেকে সৌরদাগ চক্র বেশ নিয়মিতই ছিল। মাউন্ডার মিনিমামকে বলা হয় ‘ক্ষুদ্র বরফ যুগ’। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে এমন কোনো নতুন বরফ যুগের শুরু হয় কি না! সেই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বিজ্ঞানী ডেভিড হ্যাথওয়ে বলেন, এই আশঙ্কার কোনো ভিত্তি নেই। এখনকার মিনিমাম পিরিয়ড বড়জোর ২০১২ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। তবে এর আগেই সুর্য তার তেজ ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস করেন হ্যাথওয়ে। মাউন্ডার মিনিমামের আগের সময় থেকে সৌরদাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এই ধারণা করেন।
সোলার স্পট মিনিমাম পিরিয়ড চলাকালে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমতে পারে। পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানো আমাদের খুব প্রত্যাশিত হলেও সোলার মিনিমামের কারণে হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। সৌর বিকিরণসহ অন্যান্য কিছু কারণে আমরা চাই সুর্য থাকুক তার তেজ নিয়ে, যেমনটা তাকে মানায়।
- জাবেদ সুলতান পিয়াস

0 comments: